কালাজ্বর নিরাময়ের উপায়
কালাজ্বর
কালা জ্বর ভিসারাল লেশমানিয়াসিস বা ডামডাম ফিবার নামে পরিচিতি একটি রোগ।এটি একটি পরজীবী ঘটিত দীর্ঘস্থায়ী ও প্রাণঘাতী রোগ।লেইসম্যানিয়া ডনোভানী নামক একপ্রকার প্রোটোজোয়া পরজীবীর সংক্রমনের মাধ্যমে ছড়ায়। কালা জ্বর বেলে মাছির কামড়ের সাহায্যে বিস্তার লাভ করে থাকে।
এই রোগ প্রথমে মানুষের রক্তের ম্যাক্রোফেই দ্বারা বাহিত হয়ে অন্ত্রে প্রবেশ করে এবং পরবর্তীতে লিভার অস্থিমজ্জা ও প্লীহা আক্রান্ত করে বংশ বৃদ্ধি করে থাকে। ম্যালেরিয়ার পরে এটি পরজীবী ঘটিত রোগ গুলোর মধ্যে সবচাইতে প্রাণঘাতী একটি রোগ। এই রোগের চিকিৎসা সময়মতো সঠিকভাবে না করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে
কালাজ্বর হওয়ার কারণ
কালা জ্বরের লক্ষণসমূহ
কালাজরে আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকি থাকে যাদের
কালা জ্বর সাধারণত বেলে মাছির কামড়ে ছড়ায়। বেলে মাছি সাধারণত ঘর এবং ঘরের আশেপাশের মেঝে, দেয়াল, কাঠের আসবাবপত্রের ফাটল, ভাঙ্গা ইট পাথরের নিচে এবং ঝোঁপঝাড়ের মধ্যে দিনের বেলায় লুকিয়ে থাকে।এরা সন্ধ্যা হলে এইসব জায়গা থেকে বের হয়ে ভোর পর্যন্ত সময়ে মানুষ,পশু, পাখিকে কামড়িয়ে থাকে।
স্ত্রী জাতীয় বেলে মাছি এদের ডিমের পরিপক্কতার জন্য পশু,পাখি এবং মানুষের রক্ত গ্রহণ করে থাকে।স্ত্রী জাতীয় বেলে মাছি কামড়ানো এমন পশু পাখির মাংস খাওয়ার মাধ্যমেও এই রোগ ছড়িয়ে থাকে। এছাড়াও যে সকল এলাকায় কালাজ্বর আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি অথবা নোংরা বস্তি এলাকা এইসব জায়গায় যাওয়ার মাধ্যমেও এই রোগ ছড়িয়ে থাকে।
কালা জ্বরে আক্রান্ত হয় বেশিরভাগ যারা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে এমন মানুষ। বিশেষ করে যারা আয়রন, ভিটামিন এবং দস্তা এর অভাবে ভুগছেন। এসব লোকেদের কালাজ্বর হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এছাড়াও ৫ থেকে ১০ বছরের শিশুদের কালাজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবথেকে বেশি।
কিছু আদ্র এবং উষ্ণ এলাকাসহ যারা বনাঞ্চল বা বুঝতে টাইপের এলাকায় বসবাস করে, এমন জায়গায় বসবাসরত মানুষ এবং শিশুদের কালাজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায়। যারা এইডস রোগে আক্রান্ত সেসব রোগীদেরও কালাজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
কালাজ্বর নির্ণয় করার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জ্বর থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের নিকটস্থ হতে হবে। জ্বরের লক্ষণ দেখে ম্যালেরিয়া নাশক অথবা অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ সেবনেও কোন কাজ না হলে, এইটা কালা জ্বর হতে পারে।
রোগ নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা,প্লীহা অথবা অস্থিমজ্জা থেকে নমুনা নিয়ে শরীরে কালা জ্বরের উপস্থিতি আছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য পরীক্ষা করা হতে পারে। আবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে রেপিড ডায়াগনস্টিক টেস্ট এর মাধ্যমে সহজেই কালাজ্বর রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে।
কালাজ্বরের চিকিৎসা
কালা জ্বর একটি মারাত্মক রোগ। সঠিক সময়ে এই রোগের চিকিৎসা না হলে সেটা মারাত্মক আকার ধারণ করে। এমনকি চিকিৎসা নেওয়ার পরও শতকরা পাঁচজন রোগী মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকে। কালা জ্বরের কোন প্রতিষেধক নেই। কালা জ্বর হয়েছে সন্দেহ হলেই প্রথম অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগ শনাক্ত করার পর চিকিৎসকের পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হয়।
কালা জ্বর লিইসম্যানিয়াসিস রোগের একটি ধরন যা লিইস ম্যানিয়া ডনোভ্যানি দ্বারা হয়ে থাকে। বর্তমানে এ রোগের চিকিৎসায় মুখে খাওয়ার ক্যাপসুল বাংলাদেশের সবথেকে বেশি ব্যবহার হচ্ছে এবং এটা সরকারিভাবে বিনামূল্যে দেওয়া হয়। কালাজ্বর একটি নিরাময় যোগ্য রোগ।
এই রোগটি শনাক্ত হওয়ার পর দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে কালা জ্বর থেকে নিশ্চিত মুক্তি মিলবে। কাজেই শরীরের কালা জ্বর হয়েছে এমন ধরনের লক্ষণগুলো দেখলে খুবই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কালাজ্বর নিরাময়ে করণীয়
বেলে মাছি নিধনের জন্য ডিডিটি স্প্রে করার মত এলাকায় ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ করা। বাড়ির আশেপাশে ঝোপঝাড়, নোংরা স্থান, ড্রেন, গরুর ঘর অথবা মাটির ঘরের দেয়ালের ফাঁকে নির্দিষ্ট সময় পর পর জীবাণুনাশক স্প্রে করার মাধ্যমে এই রোগ থেকে আমরা নিজেদেরকে নিরাপদে রাখতে পারি।
বেলে মাছি যেন বংশবৃদ্ধি না করতে পারে সেজন্য মাটির মেঝে বা দেয়াল ফাটল হীন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মানুষের থাকার ঘর গোয়াল ঘর থেকে কিছুটা দূরে স্থাপন করতে হবে। সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত সময়ে অযথা বাইরে না ঘোরাফেরা করাই ভালো। কারণ এই সময় মাছিগুলো সব থেকে বেশি সক্রিয় থাকে।
যদি বাইরে যাওয়া খুবই প্রয়োজন হয় তবে শরীর যতটা সম্ভব ঢেকে রাখতে হবে। বাইরে যাওয়ার সময় অবশ্যই বড় হাতার শার্ট এবং প্যান্ট পড়ে শরীর পুরোটা ঢেকে বের হওয়াটাই উত্তম। বেশি সুরক্ষার জন্য জুতা মোজাও পরিধান করতে পারেন। বেলে মাছির আকার মশার থেকেও অনেক ছোট। এরা ছোট ছোট হাফ ফোকর দিয়ে যে কোন জায়গায় অনায়াসে ঢুকে যেতে পারে।
তাই দরজা ও জানালায় নেট ব্যবহার করতে পারেন এবং ঘরের দেয়ালে কোন ফুটো থাকলে তা অবশ্যই বন্ধ করে দিতে পারেন। ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে এবং বিছানার সাথে চারি সাইডে খুব ভালো হবে মশারি গুজে দিতে হবে। মাঝে মাঝে ঘরে চারপাশে জীবাণুনাশক ঔষধ স্প্রে করতে হবে। যেসব অঞ্চলে সংক্রমণের ঘটনা বেশি ঘটে সেইসব অঞ্চলে ভ্রমণ থেকে দূরে থাকতে হবে।
লেখকের মন্তব্য
যেহেতু শুধুমাত্র স্ত্রী জাতীয় বেলে মাছের কামড়ে এই রোগটি ছড়িয়ে থাকে, তাই অবশ্যই বাসা বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বাড়ির আশেপাশে যেন কোন ময়লার স্তুপ বা ঝোপঝাড় গড়ে না উঠে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে।
মনে রাখবেন, কালাজ্বরে সংক্রমিত হলে ৯০% পর্যন্ত মৃত্যু ঝুঁকি থাকে। তাই কালা জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং রোগ শনাক্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।এই রোগটি শনাক্ত হওয়ার পর দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে কালা জ্বর থেকে নিশ্চিত মুক্তি মিলবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url