প্রতিদিন চিরতার পানি খাওয়ার উপকারিতা

চিরতা 

চিরতা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পাওয়া যায়। তবে এটি সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হয়েছে ইউরোপে। ভেষজ ঔষধি গুণসম্পন্ন এই গাছের পাতা ও শিকড়ের স্বাদ তেতো হলেও এর ফল মিষ্টি হয়ে থাকে। এই গাছের ফল সাদা রংয়ের হয়ে থাকে। চিরতা তেতো সাধের হয়ে থাকলেও এর মধ্যে রয়েছে নানান ধরনের গুনাগুন।



চিরতা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। নিয়মিত তেতো খাবার খেলে অসুখ হওয়ার প্রবণতা অনেক কম থাকে। চিরতা যত বেশি তিতা হোক না কেন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা এর অনেক গুণ বেশি। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য চিরতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

সূচিপত্রঃপ্রতিদিন চিরতার পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন- 

চিরতা খাওয়ার উপকারিতা

চিরতা একটি ঔষধি গুনসম্পন্ন ভেষজ উদ্ভিদ। চিরতার উপকারিতা ও গুনাগুন অসাধারন। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে চিরতা। নিয়মিত তেতো খাবার খেলে অসুখ হওয়ার প্রবণতা অনেক কম থাকে। চিরতা এর মধ্যে অন্যতম। চিরতা খেলে যে কোন কাঁটা, ছেঁড়া ক্ষতস্থান দ্রুত শুকায়।

ইউনানী চিকিৎসা অনুযায়ী চিরতা হৃদপিণ্ড ও যকৃতের সবলকারক, চোখের জ্যোতিবর্ধক ও জ্বর রোগে বিশেষ উপকারে এই চিরতা। ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য চিরতা খুবই জরুরী পথ। চিরতা রস দ্রুত রক্তে চিনির মাত্রা কমিয়ে দেয়।উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ কমাতে চিরতা অনেক জরুরী। 

চিরতার রস কৃমিনাশক।শরীরে ঝিমুনিভাব, জ্বর জ্বর লাগা দূর করতে পারে চিরতর রস। রক্ত পরিষ্কার করে চিরতার রস। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে ও চিরতার গুরুত্ব অপরিসীম।ত্বক সম্পর্কিত রোগ নিরাময় করতেও চিরতার সহায়তা করে।চিরতার পানি খাওয়ার উপকারিতাগুলো আলোচনা করা হল-

আরো পড়ুনঃগৃহিণীদের জন্য ঘরে বসে অনলাইনে ইনকামের  সেরা ৮টি উপায়

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চিরতা পানির উপকারিতা 

চিরতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী একটি ভেষজ।চিরতার পানি নিয়মিত খাওয়ার ফলে রক্তে সুগারের পরিমাণ কম রাখতে সহায়তা করে।ব্লাডে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে চিরতা পানি। এছাড়াও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় চিরতার পানি।

লিভারের সমস্যাই চিরতা পানির উপকারিতা

বর্তমান সময়ে অনেকেই লিভারের সমস্যায় ভোগেন। লিভারের এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে চিরতা পানি অনেক উপকারী। চিরতা পানি আপনার লিভার কে পরিষ্কার রাখে। এছাড়াও চিরতা পানি আপনার লিভারের বিভিন্ন সমস্যা যেমন-ফ্যাটি লিভার এবং অন্যান্য সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।

আরো পড়ুনঃপানি শূন্যতার কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার

শরীরের এলার্জি সারাতে চিরতা পানির উপকারিতা

অনেকেরই মারাত্মক এলার্জির সমস্যা থাকে। শরীরে এলার্জির সমস্যা নাই এমন মানুষ খুব কমই খুঁজে পাওয়া যায়। এলার্জির কারণে সব সময় শরীর চুলকায়, শরীরে গোটা গোটা দানা দানার মত হয়ে যায়, লাল চাকা আকৃতির হয়ে ওঠে, চোখ লাল হয়ে যায় অথবা ফুলে যায়। এলার্জি সমস্যা দূর করতে চিরতার পানি অনেক উপকারী।


প্রতিদিন সকালে খালি পেটে চিরতার পানি খেলে এলার্জির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। আগের দিন রাতে চার থেকে পাঁচ গ্রাম চিরতা ২৫০ গ্রাম হালকা কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে, পরদিন সকালে সেই পানি ছেঁকে সেখানে দিনে দুই থেকে তিনবার পান করতে হবে। এতে আপনার শরীরে এলার্জি সমস্যা ধীরে ধীরে দূর হতে থাকবে। তবে অ্যালার্জি হয় এমন সব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 

জ্বর সারাতে চিরতা পানির উপকারিতা 

বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। আর এই ঋতু পরিবর্তনের দেশে বিভিন্ন সময় ঋতু পরিবর্তনের ফলে অনেকেরই জ্বর হয়, তার সাথে সাথে সর্দি কাশি বেড়ে যায়। এ সময় গা-হাত-পা কামরাই। এরকম অবস্থা হলে চার থেকে পাঁচ গ্রাম চিরতা চার কাপ পানিতে সিদ্ধ করুন এবং চার কাপ পানি অর্ধেক অর্থাৎ ২ কাপ হলে নামিয়ে ফেলুন। পানি ঠান্ডা করে পরবর্তীতে সকালে অর্ধেক এবং বিকালে অর্ধেক খেলে এই সমস্যা থেকে ধীরে ধীরে সমাধান পাবেন। কিছুদিন নিয়মিত চিরতা পানি খেলে জ্বরের ভাবটা দূর হয়ে যাবে।

আরো পড়ুনঃপুষ্টিগুণে ভরা কলা খাওয়ার উপকারিতা

পিত্ত জ্বর বা ঘন ঘন বমি সহ হালকা জ্বরে চিরতা পানির উপকারিতা 

পিত্ত জ্বরে অনেক সময় প্রচন্ড বমি হয়, এবং বমি তেতো এবং হালকা সবুজ বা হলুদ রঙের হয়ে থাকে। সাধারণত বমি হলে পেটে কিছুই থাকেনা। এইরকম সমস্যা হলে দুই কাপ গরম পানিতে পাঁচ গ্রাম চিরতা একটু থেঁতলে ভিজিয়ে রাখুন। ভেজানোর দুই থেকে তিন ঘন্টা পার হলে পানিটি ছেঁকে অল্প অল্প করে পান করতে হবে। এতে আপনার বমি থেমে যাবে। 

ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও তারুণ্য ধরে রাখতে চিরতা পানির উপকারিতা 

ত্বকের জন্য চিরতা পানি অনেক উপকারী। চিরতা পানি ত্বকের যেকোন ইনফেকশন সহজেই দূর করতে পারে। এছাড়াও ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চামড়ার ঘা এবং অন্যান্য ক্ষত ছাড়াতে চিরতা পানি অনেক উপকারী। এছাড়াও প্রতিদিন চিরতা পানি খাওয়ার ফলে আপনার চেহারার তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে।

আরো পড়ুনঃগুণে ভরা তেজপাতার অজানা ১৬ টি গুনাগুণ  

চিরতা রক্ত পরিষ্কারক। চিরতা পানি আপনার রক্ত পরিষ্কার করে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে। রক্ত সঞ্চালন বা ব্লাড সার্কুলেশন চেহারা তারুণ্য ধরে রাখার অন্যতম প্রধান শর্ত, যা আপনি প্রতিদিন চিরতা পানি পান করার মাধ্যমে পেতে পারেন। 


চিরতা পানি খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

নির্দিষ্ট মাত্রায় পরিমাপ মেনে চিরতা পানি খাওয়া অবশ্যই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তবে যে কোন জিনিস অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে অবশ্যই সেটার কোনো অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন এমন কোন অসুখ হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিরতা পানি খাওয়া উচিত।

চিরতা তেতো স্বাদের হওয়ায় অনেকেই চিরতা খেয়ে সহ্য করতে পারে না বমি করে ফেলে অথবা সব সময় বমি বমি ভাব লাগতে পারে। গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে কখনোই চিরতা পানি খাওয়া উচিত নয়। এছাড়াও ডায়াবেটিসের রোগীদেরও চিরতা পানি সাবধানের সাথে সেবন করা উচিত। 

লেখকের মন্তব্য 

চিরতা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। নিয়মিত তেতো খাবার খেলে অসুখ হওয়ার প্রবণতা অনেক কম থাকে। চিরতা যত বেশি তিতা হোক না কেন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা এর অনেক গুণ বেশি। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য চিরতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

নির্দিষ্ট মাত্রায় পরিমাপ মেনে চিরতা পানি খাওয়া অবশ্যই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তবে যে কোন জিনিস অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে অবশ্যই সেটার কোনো অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে।দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন এমন কোন অসুখ হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিরতা পানি খাওয়া উচিত।চিরতা পানি খাওয়ার উপকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে এই পোস্টে সহজভাবে বিশ্লেষণ করে বোঝানোর চেষ্টা করেছি।







এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url