পানি শূন্যতার কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার
আমাদের দেশে ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ রোগজীবাণু দ্বারা সংক্রমণ।এসব জীবাণু শরীরে ঢুকে-
- দূষিত খাবার পানি -যেমনঃ পুকুর বা নদীর পানি,অরক্ষিত কুয়ার পানি অথবা ময়লা পাত্রে রক্ষিত পানি পান করলে।
- দূষিত খাবার -যথাঃ ভালভাবে না ধোয়া খাবার,বাইরে অথবা গরম স্থানে অনেকক্ষণ রাখা রান্না করা খাবার,ময়লা মাছি ও পশু থেকে অরক্ষিত খাবার খেলে।
- নিরাপদ নয় এমন খাবার খেলে - রান্নার আগে দীর্ঘ সময় ফেলে রাখা কাঁচা খাবার যেমন- মাছ,মাংস।
- অপরিষ্কার হাত - যেমনঃ খাওয়ার আগে অথবা মল ত্যাগ করার পরে বা কোন কাজ করার পরে হাত না ধুয়ে রান্না করলে বা খাবার খেলে।
একজন ব্যক্তি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে এই লক্ষণগুলো দেখা দিবে।যেমন-
- পেটে খিঁচুনি বা ব্যথা অনুভূত হওয়া
- পেট ফেঁপে থাকা
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
- ঘন ঘন মল ত্যাগ
- মলে আঁশটে দূরগন্ধ হওয়া
- মলে অনেকসময় রক্ত দেখা যায়
- তরল পানির মত মল অথবা ফেনা যুক্ত মল হবে
- জ্বর হওয়া
- পানির মত পাতলা পায়খানা
- বমি হওয়া
- খাবারে অরুচি
- জ্বর হওয়া
- চোখ বসে যাওয়া
- মুখ ও জিহ্বা শুকিয়ে আসা
- প্রস্রাব কমে যাওয়া
- শিশু অস্থির অথবা নিস্তেজ হয়ে পড়া
ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়।শরীরের জন্য ঐ লবণ ও পানি খুব প্রয়োজন,এর ঘাটতির ফলে শরীর তাড়াতাড়ি দুর্বল হয়ে পড়ে।পানি ও লবণ তাড়াতাড়ি পূরণ করা প্রয়োজন।যাদের শরীর থেকে বেশি লবণ ও পানি বেরিয়ে গেছে তাদের পানি ঘাটতি দেখা দেয়।
(নিচের যে কোন দুইটি লক্ষণ অবশ্যই থাকতে হবে)
- রোগী পান করতে পারবে না
- চোখ বসে যাবে
- রোগী নেতিয়ে পড়ে বা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে
- পেটের চামড়া শক্ত হয়ে যাওয়া
- গাঢ় হুলুদ বর্ণের এবং তীব্র গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হওয়া
- ক্লান্ত বোধ করা
- চোখ,ঠোট ও মুখ শুকিয়ে যাওয়া
(নিচের যে কোন দুইটি লক্ষণ অবশ্যই থাকতে হবে)
- রোগী খুব তৃষ্ণার্ত বোধ করে
- চোখ বসে যায়
- রোগী অস্থির বা খিটখিটে মেজাজের হবে
- পেটের চামড়া শক্ত হয়ে যাওয়া
- মুখ ও জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়া
- চোখ বসে যাওয়া
- খিটখিটে হয়ে যাওয়া
- তীব্র জ্বর আসা
- কান্নার সময় চোখ দিয়ে পানি না পড়া
- ঝিমিয়ে পড়া অথবা স্বাভাবিকের তুলনাই অধিক ঘুমানো
সচরাচর ডায়রিয়া রোগীর পানি ঘাটতি প্রতিরোধ করা সম্ভব।ডায়রিয়া শুরু হওয়া মাত্রই রোগীর পর্যাপ্ত স্যালাইন পান করা উচিত। শরীর থেকে যে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়, তা পূরণ করার জন্যই এর প্রয়োজন। স্যালাইন না পাওয়া গেলে লবণ ও চিনি /গুড় নির্দিষ্ট মাত্রায় নিরাপদ পানিতে গুলিয়ে পান করা উচিৎ।যদি একবারে পানি পান করতে কষ্ট হয় তবে কিছু সময় পর পর পানি পান করতে হবে।অতিরিক্ত গরম অথবা তীব্র রোদে কাজ করা এড়িয়ে চলুন।অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার,পানিও এবং চা-কফি পান করা এড়িয়ে চলুন।
প্রথমে সাবান ও পানি দিয়ে আপনার হাত ধুয়ে নিন।একটি পরিস্কার পাত্রে আধালিটার/আধাসের ফুটানো ঠাণ্ডা পানি অথবা আর্সেনিক মুক্ত টিউবওয়েলের পানি,তিন আঙ্গুলের এক চিমটি লবণ ও এক মুঠো গুড়/চিনি নিন এবং ভালভাবে গুলিয়ে/ঝাঁকিয়ে স্যালাইন তৈরি করুন।
আপনার কাছে রাখা খাবার স্যালাইনের একটি প্যাকেট নিয়ে স্যালাইন তৈরি করে রোগীকে খেতে দিন।আপনার কাছে খাবার স্যালাইনের প্যাকেট যদি না থাকে তবে বাসায় খাবার স্যালাইন তৈরি করে রোগীকে খওয়াতে থাকুন এবং এর সাথে রোগীকে তরল খাবার দিতে পারেন।যেমন-চিড়া পানি,ডাবের পানি,ভাতের মাড় ও স্যুপ।এছাড়াও ফলের রসে বিশুদ্ধ পানি মিসিয়ে পাতলা করে খওয়া যেতে পারে।এসব খাবারের পাশাপাশি স্বাভাবিক খাবার খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে।
শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতাঃ
শিশুদের পানিশূন্যতার চিকিৎসা শেষে পুনরায় পানির ঘাটতি প্রতিরোধে শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমানে তরল খাবার খাওয়ানো অতি গুরুত্বপূর্ণ।
- শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে।কোন কারনে যদি শিশুকে ফর্মুলা দুধ খাওয়ান তবে সেটাই খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে।তবে ফর্মুলা পাতলা করে বানিয়ে কখনই শিশুকে খাওয়াবেন না।ফর্মুলার কৌটাই গাঁয়ে লেখা নির্দেশনা অথবা সাথে থাকা কাগজের নির্দেশনা অনুযায়ী ফর্মুলা বানিয়ে খাওয়াতে হবে।
- যেসব শিশু ফর্মুলা অথবা শক্ত খাবার খায় সেসব শিশুকে বেশি পরিমানে পানি খাওয়াতে হবে তবে অল্প অল্প করে বারবার খাওয়াতে হবে।শিশুদের স্বাভাবিক খাবার খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে তবে একসাথে বেশি খাবার খাওয়ানো যাবে না।
- শিশুর শরীরে লবণ পানির ঘাটতি পূরণের জন্য ওরস্যালাইন খাওয়াতে পারেন।তবে শিশুদের বাজার থেকে কিনে আনা ফলের জুস অথবা কোমল পানীয় খাওয়ানো যাবে না।
যে লক্ষণগুলো থাকলে অবশ্যই রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া লাগবেঃ
- সারাদিনে প্রস্রাব না হওয়া
- হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে ঝিমিয়ে পড়া
- বসে থেকেও মাথা ঘুরান না যায়
- দ্রুত শ্বাস নেওয়া
- খিঁচুনি হওয়া
- পালসের গতি অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া
- জ্ঞান হারিয়ে ফেলা
- শরীর ঘেমে যেয়ে আবার ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া
- চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া
পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে কিছু ভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণসমূহঃ
- মুখ শুকিয়ে যাওয়া
- ঝিমিয়ে পড়া
- মাথার উপরের নরম অংশ (মাথার চাদি)কিছুটা বসে যাওয়া
- প্রস্রাব গাঢ় হলুদ বর্ণের হওয়া অথবা দিনের অর্ধেকাংশের মধ্যে কোন প্রস্রাব না হওয়া
- হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া এবং শরীরে ছোপ ছোপ হয়ে যাওয়া
- শিশুর কান্নার সময় চোখে কোন পানি না থাকা
কিভাবে আমরা ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে পারিঃ
যে সকল খাল-বিল,কুয়া,পুকুর বা নদীর পানি মানুষ বা প্রাণী দ্বারা দূষিত হচ্ছে সেই পানিতে ডায়রিয়ার জীবাণু থাকে।এসব পানি খাবার ও রান্না করার আগে অবশ্যই ফুটিয়ে নিতে হবে।বাইরের খোলা খাবার এড়িয়ে চলুন।যে দিনের রান্না করা খাবার সেদিনই খাবার খেয়ে ফেলার চেষ্টা করুন।মলত্যাগে স্যানিটারি পায়খানা ব্যবহার করুন।মলত্যাগের পর ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন।খাবার খাওয়ার আগে এবং যেকোন কাজের পরে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করুন।বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।পান করা ও রান্না করার জন্য এলাকায় যেন নিরাপদ পানির উৎস থাকে-তা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় ব্যক্তি বা নেত্রি,জনসাধারণ ও অন্যান্যদের সাথে একত্রে কাজ করা।নিজে পরিষ্কার থাকুন এবং আপনার আশেপাশে পরিষ্কার পরিছন্ন রাখুন।
মন্তব্যঃ
এই পোস্টটি পরার পর আপনারা ডায়রিয়া কিভাবে হয়,ডায়রিয়ার লক্ষণ ও প্রতিকার,পানি স্বল্পতার কারণ,লক্ষণ ও প্রতিরোধ এবং ডায়রিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন যা আপনার দৈনন্দিন জীবনে কিছুটা হলেও সহায়ক হবে এই আশা নিয়ে আমার পোস্টটি এখানেই শেষ করছি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url